কথকের কথা
শতাব্দীর শেষ প্রচেষ্টা বিফলে যাবার উপক্রম। নিপিড়ীত মানবতার শেষ প্রক্ষেপন হিসেবে ‘এই চুপ করে আছো কেন?’ একটি বাক্যই স্তব্দ করে দিয়েছে সমস্ত কিছু। আচমকা থেকে থেকে প্রশ্নবাণ শফিকের হৃদস্পন্দনকে ত্বরান্বিত করে হৃদস্পন্দনের শব্দকে জ্যামিতক হারে রুপ দিয়েছে।
সময়টা ভলো যাচ্ছে না। সময় সবচেয়ে বড় অসুখ। আবার সময়ই তার বড় ঔষুধ কৃষ্ণকলি তখন সবে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। একটা দায়বোধ এসে ভর করেছে যৌবণে । একটু স্বাধীনচেতা ভাবে বাঁচার স্বপ্ন কৃষ্ণকলির শারীরিক রিদমকে খাপছাড়াভাবে বাড়িয়ে তুলেছে।
ফেইস বুক, শতাব্দীর সামাজিকীকরণের অতিলৌকিক প্রজ্জলন। বনসাইয়ের মত করে বাড়া বয়স কমানোর জাগতিক হাতিয়ার।
শফিক একটা ক্ষুধার নাম। যে ক্ষুধা গ্রাস করে দেয় রাতের শেষভাগ, শিশিরের পবিত্রতা, প্রগতিশীলতার গতি আর আদিম হবার প্রেরণা জাগিয়ে তোলো। শফিক সভ্যতার কারিগর, নিয়ন্ত্রক একজন পুরুষ মাত্র।
রাতের শেষভাগ। সামান্য আলো জ্বলছে সুর্য্য।ে অল্প কিছু অপেক্ষা তার পরেই আরেক দিনের শুরু, অপরাধী করে তুলবে শফিক কে। কৃষ্ণকলি একটা চেয়ারের বসা। শফিক সামনে পানি এগিয়ে দিয়ে স্তব্দ হয়ে গেল। শফিকের গান গুলো সারা ঘরে টইটম্বুর একটা ভাব জাগ্রত করেছে। কবিতা গুলো আওরাচ্ছে নিজেকে। হঠাৎ “এই চুপ করে আছো কেন?”-প্রশ্নটা সময়সহ সবকিছু কে স্তব্দ করে দিয়েছে। সভ্যতা দাড়িয়ে গেছে কচ্ছপের পিঠে।
শফিক কৃষ্ণকলি পালিয়েছে। এটা শহরের বড় খবর। সমাজ, ধর্ম, পরিবার, জাত, বর্ণ সব এক বিন্দুতে এবারই প্রথম মিলিত হওয়া নয়, কবে প্রথম শ্যামের বাঁশি বেজেছিল তা মালুম করা ভার। তার পরেও খবরে উত্তাল সব কিছু।
ফেইসবুকে পরিচয় স্বনামধন্য মুসলমান ব্যবসায়ীর ছেলে শফিক এর সাথে নিরামিষ ভোজী ব্রাহ্মণ হিন্দু মেয়ে কৃষ্ণকলির। কিছুদিনের কথায় ভালোলাগা। তারপর প্রণয়ের আখ্যান এ ধাবিত হওয়া। সব ছেড়ে মানুষ হবার চেষ্টায় ভালোবাসা নামক জীবনের শক্রর মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে করা আজন্ম পাপ। দেখতে সুন্দর নয় শফিক কিন্তু তার কণ্ঠে সুমনের ‘জ্বাতিশ্বর’ অনেক সুন্দর। কৃষ্ণকলির প্রেমে পড়া ওখানেই।
সন্ধ্যা থেকে না খেয়েই বসে আছে দুজনেই নিভূত এক পল্লীতে। একটু আগে এক বন্ধুর সাথে কথা হয়েছে মুঠোফোনে কৃষ্ণকলির দিদিকে শহুরে মুসলমানরা ধর্ষণ করেছে। (সংখ্যালঘু আবার ধর্ষণ হয় নাকি? ওটা তো পবিত্র কাজ!) শফিক কে খুঁজে পাওয়া গেলে দুজনকেই হয়তোবা একবারের জীবনের পালা চুকিয়ে ‘জাতিশ্বর’ গাইতে হবে আবার।
কৃষ্ণকলি আর শফিক দুই গ্লাসে সামান্য বিষ আর পানি মিশিয়ে প্রাণ নাশী পানীয় নিয়ে বসে ছিল। কিছু মুহূর্ত অপেক্ষা করছে তারা। মানুষ মৃত্যুকে বরণ করতে চায় নি, বা চায় না কখনোই কিন্তু আজ সব কিছু এক বিন্দুতে মেলানোর জন্য মৃত্যু খুবই দরকার। মৃত্যুই এখানে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ।
আর একটা সকলের অবতারনা হচ্ছে ধীরে ধীরে।
সকল নিরবতা ভেঙ্গে কৃষ্ণকলি ও সভ্যতার বুক ফেটে বেড়িয়ে আসলো,
-চুপ করে আছো কেন?
Comments
Post a Comment